>>>>>>>>>
আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি। প্রথিতযশা সাংবাদিক এবিএম মূসার ৯০তম জন্ম দিন। প্রায় টানা ৬০
বছরের বর্ণাঢ্য সাংবাদিক-জীবন তাঁর। তাঁর এই জীবন আর ‘পূর্ব পাকিস্তান’-এর বাংলাদেশ
হয়ে উঠা যেন সমান্তরাল। এ দেশের সাংবাদিকতা পেশার গোড়াপত্তনের এবং সেই পেশাকে
একটি দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করার আন্দোলনের ইতিহাসেরও সক্রিয় সহচর এবিএম মূসা।
যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের পর সাংবাদিকতায় ফিরে এলেন এবিএম মূসা। পুনঃপ্রকাশিত পত্রিকাটি
ইতিমধ্যে সুনাম অর্জন করেছে। আজাদ আর দৈনিক সংবাদ একটুখানি বিপাকে। নুরুল
আমিনের হাতছাড়া পত্রিকাটি ছেড়ে দিলেন খায়রুল কবির, যোগ দিলে পূর্ব পাকিস্তান
সরকারের তথ্য পরিচালক পদে। হাল ধরলেন অনেকগুলো মালিক আহমদুল কবির। পত্রিকার প্রচারের জন্য নামফলক বা মাস্ট হেডের ওপর লেখা হলো : পৃষ্ঠপোষক মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। অবশ্য এই চমক পত্রিকাটির গ্রহণযোগ্যতাকে বাড়াতে পারেনি। আজাদ কী যে বেতালা চালে চলছে!
অবাঙালি মালিকের মর্নিং নিউজ পুরানা পল্টনের একটি শেড ঘর থেকে পুনঃপ্রকাশিত হলো।
নতুন প্রকাশনার প্রথম সংখ্যাটির প্রধান সংবাদের শিরোনাম : ‘মর্নিং নিউজ শ্যাল নট
ডাই’।
পত্রিকাজগতেই পরিবর্তন ঘটল, কিন্তু সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের কর্মচারীদের ভাগ্যের পরিবর্তন
হলো না। সেই ৫০-৬০ অথবা ১০০-১৫০ টাকা মাইনে। তা-ও মাসের পর মাস বাকি অথবা অবজারভার-
আজাদ-মর্নিং নিউজ-এ মাসের ১০-১৫ তারিখে বা শেষে একত্রে অথবা কিস্তিতে পাওয়া যায়।
সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংবাদিকেরা ভাবলেন একটা কিছু করতে হবে। কিছু করার উদ্যোগ
প্রথমে নিয়েছিলেন তখনকার বেসরকারি সংবাদ সংস্থার ঢাকা প্রতিনিধি আবদুল মতিন।
তিনি কিছুদিন পর বিলেন চলে গেলে উদ্যোগটি অব্যাহত রাখলেন সংবাদ-এর সৈয়দ নুরুদ্দিন আর
মর্নিং নিউজ-এর আবদুল মান্নান। পরে এতে যোগ দিলেন এ বি এম মূসা আর সংবাদ-এর
বার্তা সম্পাদক কে জি মোস্তফা। গঠিত হলো পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়ন (ইপিইউজে)
এদিকে পাকিস্তানের অপর প্রান্তে করাচি, লাহোর, পেশোয়ার আর হায়দারবাদের সংবাদপত্রের
সাংবাদিকদেরও একই করুণ অবস্থা। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলো। তাঁরাও সংগঠিত হলেন
নিজ নিজ কর্মস্থানে। গঠিত হলো মিনহাজ বার্নার নেতৃত্বে করাচি সাংবাদিক ইউনিয়ন
(কেইউজে), পঞ্জাবের হামিদ হাশিম সংগঠিত করলেন পাঞ্জাব সাংবাদিক ইউনিয়ন। এবার সারা
পাকিস্তানের সাংবাদিকেরা মিলিত হলেন লাহোরে। সেখানে ১৯৫৭ সালে সব ইউনিয়নের
প্রতিনিধিরা মিলিত হয়ে প্রতিষ্ঠিত করলেন পিএফইউজে, অর্থাৎ পাকিস্তান ফেডারেল
ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টস। সভাপতি করাচির সাফদার কোরেশী, সাধারণ সম্পাদক কে জি
মোস্তফা। সাধারণ সদস্যদের অন্যতম ছিলেন তিনি।
সারা পাকিস্তানের সব সাংবাদিক এক হলেন। কিন্তু এখন করণীয় কি? সরাসরি বেতন-ভাতার দাবি
করা হলো না। প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের কাছে াদিব করা হলো একটি ‘প্রেস
কমিশন’ গঠনের। সেই কমিশন সংবাদপত্র জগতের সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে
সরকারের কাছে রিপোর্ট দেবে। কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সরকার আইন প্রণয়ন করবে। সেই
কমিশনের চেয়ারম্যান হলেন পাঞ্জাব হাইকোর্টের বিচারপতি সাজ্জাদ আহমদ জান। মালিকপক্ষ
থেকে দুজন প্রতিনিধি হলেন দৈনিক আজাদ-এর আকরাম খাঁর ছেলে খায়রুল আনাম খান আর
করাচির জং-এর মীর খলিলুর রহমান। সম্পাদক প্রতিনিধি হলেন ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন
মানিক মিয়া আর লাহোরের নওয়া-ই-ওয়াক্ত পত্রিকার হামিদ নিজামী। সাংবাদিকদের প্রতিনিধি
হলেন পূর্ব পাকিস্তান ইউনিয়নের নবনির্বাচিত সভাপতি এস এম আলী (তখন আলী বোধ হয়
ঢাকায় পাকিস্তান টাইমস-এর ব্যুরো চিফ, পরবর্তীকালে বিদেশ ঘুরে এসে প্রথমে পাকিস্তান
অবজারভার-এর সম্পাদক, পরে ডেইলি স্টার-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক)।
যথাসময়ে প্রেস কমিশন সরকারের কাছে রিপোর্ট পেশ করলÑওয়ার্কিং জার্নালিস্ট (পরে
নিউজপেপার অ্যান্ড ওয়ার্কার যোগ করা হয়) ওয়ার্কিং কন্ডিশন অর্ডিন্যান্স। নতুন আইনে
সাংবাদিকদের কাজের সময়সীমা ও পরিবেশ-সম্পর্কীয় বিধিবিধান নিশ্চিত করা হয়। সেই
আইন অনুযায়ী ১৯৬০ সালে গঠিত হলো প্রথম ওয়েজ বোর্ড। সর্বনিম্ন মজুরি ১৫০ থেকে
বেড়ে হলো ২৭৫ টাকা, বার্তা সম্পাদকদের ৪০০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০০ টাকা হলো।
এই সুপারিশ না মেলে মালিকদের গত্যন্তর ছিল না। তখন বেসরকারি বিজ্ঞাপনের পরিধি ছিল
সীমিত, পত্রিকা সরকারি বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরশীল ছিল ৯০ শতাংশ। সরকারি নির্দেশ হলো, এই
নির্দেশ যে পত্রিকা মানবে না, তাদের সরকারি বিজ্ঞাপত বন্ধ। বলা বাহুল্য, সব মালিক তেতো
বাড়িটি গলাধঃকরণ করলেন।
এরপর এল কোরিয়ান যুদ্ধ। তারপর ১৯৬৫ সালের পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ। জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বেড়ে
চলছে। অবশেষে ১৯৬৯ সালে দাবি উঠল।
দ্বিতীয় বেতন বোর্ডের, তার আগে ইনটেরিম অ্যাওয়ার্ড, অর্থাৎ অন্তর্বর্তীকালীন ভাতা
চাই। সেই ভাতার দাবিতে সমগ্র পাকিস্তানের সাংবাদিকেরা ধর্মঘট শুরু করল ১৯৭০ সালের
ডিসেম্বরে। ধর্মঘট চলাকালে ১৯৭১ সালের জানুয়ারিতে ৬ মাসের জেফারসন ফেলোশিপ নিয়ে
তিনি চলে গেলেন হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে। তখন সবে মাত্র সত্তরের নির্বাচন শেষটি হয়েছে।
ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে চলছে নানা ধরনের বিভ্রান্তি। যাওয়ার আগে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে বিদায়
নিতে গেলেন এবিএম মূসা। বঙ্গবন্ধু বিদায় দিয়ে বললেন ‘যেতে পরিস, তবে ডাকইে ফিরে
আসিস’। হাওয়াই গেলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে মার্চের ৩ তারিখে যখন ফিরে এলেন, তখন
অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে।
এবিএম মূসা ছিল ছয় দশকের বর্ণাঢ্য সাংবাদিক-জীবন। ২০০৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর
গ্রহণকরলেও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকতাকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে
তাঁর জীবন। তবে স্বাধীন কলামিষ্ট হিসেবে তিনি স্বকীয় চিন্তাচেতনায় চলমান ঘটনার
বিশ্লেষণে ছিলেন তৃতীয় নেত্রের অধিকারী, যা তাঁকে পাঠকমহলে বিশিষ্ট করে তুলেছিল।
পাশাপাশি টেলিভিশনের টকশোতে তিনি তাঁর স্বাধীন মতামত তুলে ধরতেন, যা সাধারণ দর্শক-
শ্রোতার চিন্তার খোরাক জোগাত। ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল তিনি না ফেরার দেশে চলে যান।
#সংকলণে : সুরঞ্জিত নাগ, সহ-সম্পাদক দৈনিক অজেয় বাংলা
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- » বাংলাদেশ সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ ফেনী জেলা আহবায়ক কমিটি গঠিত
- » ফেনী বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ
- » আমার দেশ সম্পাদকের রত্নগর্ভা মাতা অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগমের মাগফিরাত কামনায় ফেনীতে দোয়া
- » গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে ফেনীতে সাংবাদিকদের মানববন্ধন
- » ফেনীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাংবাদিকদের উপর হামলার গোপন পরিকল্পনা ফাঁস
- » জনতার অধিকার পার্টির চেয়ারম্যানের উপর হামলা, সংবাদ সম্মেলন
- » ফেনী পৌর বিএনপির সদস্য নবায়ন কর্মসূচি উদ্বোধন
- » ফেনীতে হেফাজতের দোয়া মাহফিলে আজিজুল হক ইসলামাবাদী- ‘আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হবে না’
- » ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ফেনীতে বিএনপি’র বর্ণাঢ্য বিজয় মিছিল, সমাবেশ “গণহত্যার দ্রুত বিচার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি”
- » ফরহাদনগরে ছাত্রদল নেতা জিয়া উদ্দিনের ভয়ে বসতবাড়ি ছেড়ে পথে ঘুরছে বৃদ্ধা দুই অসহায় বোন